গুগলের নব্য সিইও পিচাই এর বিজয়কথন
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম দিয়েই জয় করা যায় এভারেস্ট সমান সফলতা। বর্তমান বিশ্বের অনেক খ্যাতিমান মানব মানবিদের পেছনে আছে ঠিক এমনই সফলগাথার চিত্র। সাম্প্রতিক সময়ে এই তালিকায় উঠে এসেছে সাড়া জাগানো এক যুবকের নাম। তিনি গুগলে সদ্য নিয়োগ পাওয়া সিইও, সুন্দর রাজন পিচাই।
ভারতের চেন্নাইয়ের মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে শুধুমাত্র মেধা ও পরিশ্রমকে সম্বল করে পিচাইয়ের কর্পোরেট দুনিয়ার শীর্ষে উঠে আসার যাত্রাপথ হার মানিয়ে দিতে পারে সিনেমাকেও৷ ব্রিটিশ একটি কোম্পানিতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন সুন্দরের বাবা রেগুনাথ৷ সন্তানদের জন্মের পর স্টেনোগ্রাফারের চাকরি ছেড়ে দেন মা৷ টানাটানির সংসারে ছিল না টেলিভিশন বা টেলিফোনের মতো বিলাস সামগ্রী৷ গাড়ি তো বহু দূরের স্বপ্ন৷ ব্লুমবার্গের একটি রিপোর্টে সুন্দর পিচাইয়ের জীবনকাহিনি প্রেরণা জোগাতে পারে অর্থ সঙ্কটের সঙ্গে লড়াই করা বাংলাদেশের বহু মেধাবী তরুনকে।
দু-কামরার একটি ছোট্ট ফ্ল্যাটে ছিল রেগুনাথের সামান্য আয়ের সংসার৷ সুন্দর ও তার ছোটভাইকে শুতে হত বাড়ির বসার ঘরে৷ যাতায়াতের জন্য ভরসা চেন্নাইয়ের ভিড়ে গাদাগাদি পাবলিক বাস৷ আর মাঝেমধ্যে রেগুনাথের নীল রংয়ের ল্যামব্রেটা স্কুটারে সপরিবার ভ্রমণ৷ সুন্দরের যখন ১২ বছর বয়স, তখন বাড়িতে প্রথমবার টেলিফোন আসে৷ আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সেই প্রথম সরাসরি দেখাসাক্ষাৎ পরবর্তী সময়ে ‘মোবাইলে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী’ মানুষটির৷ ফোন আসার পর পিচাই প্রায় চলন্ত টেলিফোন ডিরেক্টরি হয়ে উঠেছিলেন৷ আত্মীয়দের কেউ কোনও ফোন নম্বর ভুলে গেলে পিচাইকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিতেন৷ সংখ্যা নিয়ে তার এই ক্ষুরধার স্মৃতিশক্তির পরিচয় পরবর্তী সময়ে পেয়েছেন তার সহকর্মীরাও৷ গুগলের ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যালান ইউস্টাসকে সম্প্রতি এক মিটিংয়ে চমকে দেন পিচাই৷ ভয়েস অ্যাকটিভেটেড সার্চিং নিয়ে একগুচ্ছ সংখ্যাতত্ত্ব হাজির করেন তিনি৷ বিস্মিত ইউস্টাস বলতে বাধ্য হন, ‘ওটা আমার বিষয়, অথচ পিচাই যে নম্বরগুলো পেশ করলেন আমিই জানতাম না সেগুলোর কথা৷’
পিচাই বরাবরই ভালো ছাত্র ছিলেন৷ খড়গপুর আইআইটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মেটিরিয়ালস সায়েন্স ও সেমিকন্ডাক্টর ফিজিক্স নিয়ে আরও পড়াশোনার জন্য স্কলারশিপও পেয়ে যান৷ কিন্ত্ত গোল বাঁধে আমেরিকায় যাওয়ার বিমানের টিকিট ও আনুষঙ্গিক খরচের পয়সা জোগাড় করতে গিয়ে৷ সুন্দরের বাবা প্রথমে চেষ্টা করেছিলেন ধারকর্জ করার৷ কিন্ত্ত সময়ে তা না মেলায় নিজেদের সঞ্চয় ভেঙেই ছেলের বিমানের টিকিট কাটেন রেগুনাথ৷ সেই টাকার পরিমাণ ছিল তার সারা বছরের রোজগারের থেকেও বেশি৷ পরে এ প্রসঙ্গে পিচাই বলেছিলেন, ‘আমরা যাতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাই তার জন্য বাবা মা তাদের সাধ্যের বাইরে গিয়েও সর্বস্ব দিয়েছিলেন৷’
১৯৯৩ সালে স্ট্যানফোর্ডে যাওয়ার পর পিচাইয়ের বড় শখ হয়েছিল একটা ব্যাকপ্যাক কেনার৷ কিন্ত্ত তার দাম ৬০ ডলার শুনে আঁতকে উঠেছিলেন গুগলের বর্তমান এই সিইও৷ পরে একটি অনলাইন বুলেটিন বোর্ড থেকে পুরোনো একটা ব্যাকপ্যাক কিনেই শখ মিটিয়েছিলেন তিনি৷ ছাত্রজীবনের সেই দিনগুলিতে তার সবচেয়ে বড় আক্ষেপ ছিল বান্ধবী অঞ্জলির সঙ্গে দেখা করতে না পারা৷ পরবর্তী সময়ে অবশ্য অঞ্জলিও আমেরিকায় যান, আরও পরে পিচাইয়ের ঘরনিও হন তিনি৷
স্ট্যানফোর্ড থেকে এমএস ও এমবিও করা পিচাইয়ের সুযোগ হয়েছিল ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী নেয়ারও৷কিন্তু মাঝপথেই চাকরি করতে যাওয়ার সেই ডিগ্রী আর নেয়া হয়নি পিচাইয়ের, আর এজন্য ঘাবড়ে গিয়েছিলেন তার বাবা-মা৷ অ্যাপ্লায়েড মেটিরিয়ালস নামে সিলিকন ভ্যালির একটি কোম্পানিতেই প্রথম চাকরি পিচাইয়ের৷ ২০০২ সালে হোয়ার্টন স্কুল অফ বিজনেস থেকে এমবিএ করার পর অল্প কিছুদিনের জন্য ম্যাকিনসে-তে যোগ দেন তিনি৷
পরবর্তীতে ২০০৪ সালের পয়লা এপ্রিল গুগলপ্লেক্সে পদার্পণ করেন পিচাই৷ আর সে দিনই গুগল তাদের জিমেল পরিষেবা লঞ্চ করে৷ প্রথমটায় সেটাকে এপ্রিল ফুল মনে করেছিলেন পিচাই৷ এক দশক পেরিয়ে সেই সংস্থারই সিইও হওয়ার পর হয়ত আগের দিনগুলোকে প্রেরনা হিসাবে স্মরণ করে দিয়ে যাবেন ভবিষ্যতের সুযোগসুবিধা বঞ্চিত তরুণ তরুণীদের জন্য।
প্রতিক্ষণ/এডি/ইম